প্রাথমিক তদন্তে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, এই পোস্টের পেছনে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক বেটিং ও স্ক্যাম চক্র। এটি ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বরং সুপরিকল্পিতভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি ও গুজব ছড়ানোর অপকৌশল।
২০ জুলাই ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’-এ দেওয়া সেই পোস্টে বলা হয়, ‘একটি স্কুল ভবন ধসে পড়তে যাচ্ছে, বহু শিশু প্রাণ হারাবে। আমরা এক ভয়াবহ বিপর্যয় এগিয়ে আসতে দেখছি।’ একদিন পর ২১ জুলাই দুপুর ১টা ৬ মিনিটে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। পরদিন একই পেজ থেকে আরেক পোস্টে লেখা হয়, ‘আমরা সব সময় আগেভাগেই সতর্কবার্তা দিই, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয় না। এটি লজ্জাজনক।’
অনেকেই এই পোস্টটিকে কোনো হ্যাকার গ্রুপের ‘ভবিষ্যত দেখার ক্ষমতা’ হিসেবে মনে করেন, তবে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান প্রোবফ্লাই আইটির ফাউন্ডার আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘এই পেজটি একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন বেটিং ও স্ক্যাম নেটওয়ার্কের অংশ। চারজনের পরিচালনায় — দুই নাইজেরিয়ান, একজন আমেরিকান এবং অপর একজনের পরিচয় অজানা। তারা গুজব ছড়িয়ে ফলোয়ার বাড়িয়ে স্ক্যামিং করত।’
আরেক সাইবার বিশেষজ্ঞ আব্দুল্লাহ আল জাবির বলেন, ‘তারা ভবনের ধস বলে একটি অস্পষ্ট বার্তা দিয়ে বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে জোর করে মিলিয়ে মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলছে। তারা আফ্রিকা থেকে অপারেট করছিল।’
এএফপি’র সাবেক ফ্যাক্ট-চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির স্পষ্ট করেছেন, ‘এই পেজটির অ্যানোনিমাস বা কোনো হ্যাকার গ্রুপের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এটি বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত একটি গুজব-ভিত্তিক স্ক্যাম পেজ, যা অনলাইন বেটিং প্রচারে ব্যবহৃত হয়।’
সাইবার বিশেষজ্ঞরা জনগণকে সতর্ক থাকার এবং বিশ্বস্ত সূত্র ছাড়া কোনো তথ্য বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়েছেন। আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘সরকারি ও বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম থেকে সংবাদ গ্রহণ করুন, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া অপ্রমাণিত তথ্য থেকে দূরে থাকুন।’
মাইলস্টোন দুর্ঘটনার মতো ট্র্যাজেডি কাজে লাগিয়ে ভয়াবহ গুজব ছড়িয়ে সমাজে প্রযুক্তির অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। তাই এখন সময় সচেতনতা বাড়ানোর এবং তথ্য যাচাইয়ের। কারণ ভবিষ্যত কেউ নিশ্চিতভাবে বলে দিতে পারে না, তবে প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে সৃষ্ট বিপদ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।