চীনা গবেষকরা এমন একটি নতুন জিনগত বিশ্লেষণ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দাবি করেছেন, যা অগ্ন্যাশয় ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্যানসার দ্রুত ও নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম। চীনা বিজ্ঞান একাডেমির গুয়াংজু ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিসিন অ্যান্ড হেলথের অধ্যাপক লিন দা এবং সাংহাই জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি অ্যানিম্যাল সেন্টারের পরিচালক ইয়াং ইউছিনের নেতৃত্বে তৈরি করা এই প্রযুক্তি ‘ইউনি-সি’ নামে পরিচিত।
গবেষকদের দাবি, মাত্র ১৮ ঘণ্টায় ‘ইউনি-সি’ সম্পূর্ণ ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম এবং এটি প্রচলিত বায়োপসির সমান নির্ভুল ফল দেয়। প্রযুক্তিটি একসঙ্গে তিন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে—বৃহৎ কাঠামোগত পরিবর্তন, ক্ষুদ্র মিউটেশন এবং ৩-ডি ক্রোমাটিনের গঠন।
গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে রক্তে পাওয়া বিরল সার্কুলেটিং টিউমার সেল (সিটিসি), যা টিউমার থেকে রক্তপ্রবাহে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রাথমিক টিউমারের সম্পূর্ণ জিনোমিক প্রোফাইল বহন করে। ইউনি-সি মাত্র সাতটি সিটিসি ব্যবহার করেও টিউমারের ক্ষুদ্র মিউটেশন ও কাঠামোগত পরিবর্তন প্রায় ৯০ শতাংশ নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রযুক্তিটি কেবল ক্যানসার শনাক্তে নয়, চিকিৎসাতেও সহায়তা করছে। গবেষকরা ইউনি-সি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ১০টি কাস্টম-মেড অ্যান্টিজেন তৈরি করেছেন, যা প্রাণী পরীক্ষায় শরীরের প্রতিরোধী কোষ সক্রিয় করেছে। সাধারণ ওষুধের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করলে টিউমারের আকার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
চীনা একাডেমি অব সায়েন্সেসের মতে, ‘ইউনি-সি’ বিরল টিউমার কোষের বিবর্তন ট্র্যাকিং, চিকিৎসার লক্ষ্য নির্ধারণ এবং গণ-চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গবেষকরা আশা করছেন, এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্যানসার শনাক্ত ও চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটাবে।
অধ্যাপক লিন দা জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তি মৌলিক গবেষণা ও চিকিৎসার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবে, কোষ বিভাজনের ধাপ নির্ধারণ, রোগ সৃষ্টিকারী জিন শনাক্তকরণ এবং ক্যানসারের প্রাথমিক চিকিৎসায় সহায়তা করবে।