সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও এর ফলে পাখি, বাদুড় ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মারডক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী পরিবেশবিদ ট্রিশ ফ্লেমিংয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সৌর ফার্মের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৪ হাজার ৭০০ বর্গমাইল জমি দখল করা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ার সমান। এই জমির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।
গবেষণায় বলা হয়, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে খারাপভাবে ডিজাইন করা সৌর প্রকল্পগুলো নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে। সমতল ও কালো সৌর প্যানেলগুলো বিশাল আয়নার মতো কাজ করে, যা প্রাকৃতিক হ্রদের মতো আলো প্রতিফলিত করে। ফলে পাখি, বাদুড় ও উড়ন্ত পোকামাকড় এই প্যানেলের কারণে বিভ্রান্ত হয়। পরিযায়ী পাখিরা অনেক সময় এই প্যানেলগুলোকে পানির উৎস মনে করে ভুল করে অবতরণ করে বা বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে। এতে পাখি ও শিকারি প্রাণীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ছে।
এছাড়া, কিছু সৌরশক্তি কেন্দ্রে তীব্র তাপ বা আলোর প্রতিফলনের কারণে পাখির মৃত্যুর ঘটনাও লক্ষ্য করা গেছে। সৌর প্যানেলের চারপাশে দেওয়া বৈদ্যুতিক বেষ্টনী সরীসৃপ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ভূমিতে বসবাসকারী প্রজাতির স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু প্রকল্পে সমান্তরাল বেড়ার মধ্যে আটকে বড় পাখি মারা যাওয়ার ঘটনাও দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা মোশন-ক্যামেরা ব্যবহার করে এসব প্রকল্পের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন।
গবেষণায় আরও বলা হয়, প্রতি মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর প্রকল্পের জন্য ২ থেকে ৬ হেক্টর জমির প্রয়োজন হয়। সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা ন্যানো-টেক্সচার্ড প্যানেল আবরণ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন, যা বন্যপ্রাণীর জন্য বিভ্রান্তিকর আলোর সংকেত কমায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা ‘রিনিউয়েবল অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনার্জি রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।