ব্রিটেনের ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডন এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ হেলথকেয়ার এনএইচএসের গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি-চালিত একটি অত্যাধুনিক স্টেথোস্কোপ উদ্ভাবন করেছেন, যা মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে হৃদরোগের সম্ভাবনা শনাক্ত করতে পারে। এই স্টেথোস্কোপ হৃৎস্পন্দনের অনিয়ম, হার্টের ভালভের সমস্যা এবং রক্ত সঞ্চালনের ত্রুটি দ্রুত ধরতে সক্ষম, যা রোগীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক করতে পারে।
প্রায় ২০০ বছর আগে আবিষ্কৃত ঐতিহ্যবাহী স্টেথোস্কোপের মাধ্যমে চিকিৎসকরা হৃৎস্পন্দন এবং রক্ত সঞ্চালনের শব্দ শুনে হার্টের অবস্থা নির্ণয় করেন। তবে এই নতুন এআই-চালিত স্টেথোস্কোপ প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করে এমন সূক্ষ্ম পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে, যা মানুষের কানে ধরা পড়ে না। এটি একটি দ্রুত ইসিজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম) রেকর্ড করে এবং হৃৎস্পন্দন ও রক্তপ্রবাহের তথ্য ক্লাউডে পাঠিয়ে এআই-এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে। এই প্রযুক্তি হার্ট ফেইলিওর, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন) এবং হার্টের ভালভের সমস্যা মাত্র ১৫ সেকেন্ডে শনাক্ত করতে পারে।
গবেষকদের মতে, সাধারণত একজন মানুষের হৃৎস্পন্দন মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বারের মধ্যে থাকে এবং এর একটি নির্দিষ্ট ছন্দ থাকে। এই ছন্দে কোনো অনিয়ম হলে, যেমন রক্তনালিতে ব্লক বা হৃৎস্পন্দন ৬০-এর নিচে নেমে গেলে, হার্ট অ্যাটাক বা শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এআই-চালিত স্টেথোস্কোপ এই সমস্যাগুলো দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিয়োলজির বার্ষিক সম্মেলনে মাদ্রিদে এই স্টেথোস্কোপের কার্যকারিতা প্রদর্শিত হয়েছে। ব্রিটেনের ২০০টির বেশি জিপি ক্লিনিকে ১২,৭২৫ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই স্টেথোস্কোপ ব্যবহারকারী রোগীরা হার্ট ফেইলিওর শনাক্তকরণে ২.৩৩ গুণ, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনে ৩.৪৫ গুণ এবং হার্টের ভালভের সমস্যায় ১.৯২ গুণ বেশি সম্ভাবনা দেখিয়েছে। তবে, গবেষকরা জানিয়েছেন, এই যন্ত্রটি সুস্থ ব্যক্তিদের নিয়মিত পরীক্ষার জন্য নয়, বরং শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি বা পায়ে ফোলাভাবের মতো লক্ষণযুক্ত রোগীদের জন্য উপযুক্ত।
ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষক ড. প্যাট্রিক বাখটিগার বলেন, “২০০ বছর ধরে স্টেথোস্কোপের নকশা অপরিবর্তিত ছিল। এই নতুন প্রযুক্তি অবিশ্বাস্যভাবে কার্যকর, যা ১৫ সেকেন্ডের পরীক্ষায় হৃদরোগ শনাক্ত করতে পারে।” ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের ক্লিনিকাল ডিরেক্টর ড. সোনিয়া বাবু-নারায়ণ বলেন, “এটি ২০০ বছরের পুরোনো স্টেথোস্কোপের ২১শ শতাব্দীর রূপ। এই উদ্ভাবন হৃদরোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণে বিপ্লব আনবে।”
ব্রিটেনের জিপি ক্লিনিকগুলোতে ইতিমধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে এবং দক্ষিণ লন্ডন, সাসেক্স এবং ওয়েলসে এর প্রসারের পরিকল্পনা রয়েছে। অনুমোদন পেলে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হবে, যা হৃদরোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।