যুক্তরাষ্ট্রের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান আলেফ অ্যারোনটিক্স বিশ্বের প্রথম ‘ফ্লাইং কার’ বা উড়ন্ত গাড়ি উদ্ভাবনের দাবি করেছে। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি পাবলিক রাস্তায় তাদের ‘মডেল জিরো’ নামের প্রোটোটাইপ গাড়িটি একটি দাঁড়ানো গাড়ির ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এই ঘটনাকে কোম্পানিটি তুলনা করেছে রাইট ব্রাদারদের ঐতিহাসিক কিটি হক ফ্লাইটের সঙ্গে। সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট এ খবর জানিয়েছে।
আলেফ অ্যারোনটিক্স প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মডেল জিরো সাধারণ গাড়ির মতো রাস্তা দিয়ে চলার পর হঠাৎ উল্লম্বভাবে উড্ডয়ন করে এবং একটি পার্ক করা গাড়ির ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এই পরীক্ষা শহরের বাস্তব পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে, যা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জিম ডুখোভনি ‘প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “এই ড্রাইভ ও ফ্লাইট টেস্ট নতুন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থার সম্ভাবনা প্রমাণ করে। আমরা আশা করি, এটি মানব ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।”
মডেল জিরোর নকশা অনন্য। বেশিরভাগ ফ্লাইং কার স্টার্টআপ ড্রোনের মতো কোয়াডকপ্টার ডিজাইন বা ভাঁজ করা ডানা ব্যবহার করে, যার জন্য উড্ডয়নের ক্ষেত্রে বড় জায়গার প্রয়োজন হয়। কিন্তু মডেল জিরো দেখতে সাধারণ গাড়ির মতো, যার রোটর ব্লেডগুলো গাড়ির চেসিসের ভেতরে লুকানো রয়েছে। এটি ১০০% বৈদ্যুতিক এবং সড়কপথে ৩২০ কিলোমিটার এবং আকাশপথে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করতে সক্ষম।
২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আলেফ অ্যারোনটিক্সের লক্ষ্য এমন একটি উড়ন্ত গাড়ি তৈরি করা, যা শুধু ধনীদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও সহজলভ্য হবে। তাদের বাণিজ্যিক মডেল ‘মডেল এ’ ইতোমধ্যে ৩,৩৩০টির বেশি প্রি-অর্ডার পেয়েছে, যার দাম শুরু হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ মার্কিন ডলার থেকে। এই গাড়ির উৎপাদন ২০২৫ সালের শেষের দিকে শুরু হবে। এ লক্ষ্যে তারা ‘পুকারা অ্যারো’ ও ‘এমওয়াইসি’র সঙ্গে উৎপাদন চুক্তি সই করেছে, যারা এর আগে এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের জন্য অ্যাভিয়েশন-গ্রেড যন্ত্রাংশ তৈরি করেছে।
আলেফের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ‘মডেল জেড’ নামে আরেকটি উড়ন্ত গাড়ি, যার দাম হবে প্রায় ৩৫ হাজার ডলার। কোম্পানিটি জানায়, তাদের গাড়ি নিয়মিত লেনে চলতে পারবে, ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলবে এবং সাধারণ পার্কিং বা গ্যারেজে রাখা যাবে। এটি যানজটের সমস্যার একটি কার্যকর সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
আলেফ অ্যারোনটিক্সের এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থায় বিপ্লব আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।